তৈরি হচ্ছে ১১টি আইটি ট্রেনিং সেন্টার
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা তৈরির বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে দেশে ১১টি আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এজন্য ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তায়নে ব্যয় হবে ৭৯৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
আগামী মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রকল্পটি। অনুমোদন পেলে চলতি মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানাগেছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির আওতায় দেশের ১১টি উপজেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন হবে। উপজেলাগুলো হলো- সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, জয়পুরহাটের কালাই, দিনাজপুর সদর, মানিকগঞ্জের শিবালয়, কিশোরগঞ্জ সদর, নারায়ণগঞ্জ সদর, চাঁদপুরের মতলব, বান্দরবানের বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ভোলা সদর, কুষ্টিয়া সদর এবং মেহেরপুর সদর।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ন্যূনতম এসএসসি বা সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আইটিতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপ তৈরি এবং আইটি খাতে যুব সমাজের আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- পাঁচ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, আটটি ছয়তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ইনকিউবেশন ভবন নির্মাণ এবং তিনটি চার তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ইনকিউবেশন ভবন তৈরি।
এছাড়া পরামর্শক নিয়োগ, ১০টি যানবাহন সংগ্রহ, অভ্যন্তরীর্ণ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপন, অভ্যন্তরীর্ণ রাস্তা নির্মাণ, বিভিন্ন ধরণের কম্পিউটার এক্সিসরিজ, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল মেশিনারিজ সংগ্রহ, ফার্নিচার সংগ্রহ এবং জনবল নিয়োগসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় দেশের বিপুল সংখ্যক তরুণ বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য আইটি আইটি সেক্টরের অবকাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টি হবে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রি ল্যান্সার বা স্টার্টআপ তৈরি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে যুবকদের জীবনমান উন্নয়ন এবং উদ্যোক্তা তৈরি করা যাবে।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘আগে থেকেই দেশের ৮টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ১১টি আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সবগুলো জেলায় এটি স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশিও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের আইটি খাতে বিনিয়োগের জন্য দক্ষ মানব সম্পদ পাবে। সার্বিক বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদন যোগ্য।
এদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ‘বর্তমান বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। ক্রমবর্ধমান ও বিকাশমান তথ্য সংরক্ষণ, বিতরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন বাড়ানোর দরকার। বর্তমান সরকার ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী উন্নত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। ফলে আইটি প্রযুক্তি মানুষের সৃজনশীলতা, কর্মক্ষমতা সৃষ্টিতে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হবে। মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে বাংলাশেকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে জ্ঞানভিত্তিক মানবসম্পদ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
আইসিটি বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্জনের জন্য দেশের সব বিভাগ বা জেলায় হাই-টেক বা আইটি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮টি হাইটেক পার্ক স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার কাওরান বাজারের জনতা টাওয়ারে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্ক ও নাটোরে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইকনিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।
এছাড়া কলিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেট ও রাজশাহীতে বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলছে। দেশের বিপুল সংখ্যক তরুণ বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদানের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এসব চিন্তা থেকেই প্রকল্প প্রস্তাবটি করা হয়েছে।